
’সম্প্রীতির আলোকে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন’ নিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় ঢাকার বনানীতে গুলশান-বনানী সর্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশন (GBSPF) এর উদ্যোগে শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে। গত ২৮শে সেপ্টেম্বর ২০২৫ (ষষ্ঠী) থেকে শুরু হয়, যা চলবে ২রা অক্টোবর, ২০২৫ (বিজয়া দশমী) দুপুর পর্যন্ত।
আয়োজকরা জানান, শারদোৎসব ২০২৫ এই সংগঠনের ১৮তম আয়োজন, যা প্রতিবারের মতো এবারও প্রাণবন্ত ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে সম্মিলিত হয়েছেন হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের এবং সমাজের সব স্তরের সব বয়সের মানুষ।
পূজামন্ডপে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটেনের হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুক, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের বর্তমান হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা, বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের হাই কমিশনার ঘনশ্যাম ভান্ডারীসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ।
শারদীয় দুর্গাপূজা বাঙালি সনাতনধর্মী সম্প্রদায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবে বিবেচিত। এটি মহালয়ায় দেবীপক্ষের শুরু, এরপর মহাষষ্ঠী থেকে মহাদশমী পর্যন্ত ভক্তরা চণ্ডীপাঠ, পুষ্পাঞ্জলি, সন্ধি পূজা, আরতি, সঙ্গীত এবং ভক্তিমূলক গান পরিবেশন করেন। সাথে ছিল চিরচেনা ঢাকের বাদ্য।
ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান ও প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পাশাপাশি শিশু ও তরুণদের জন্য ছিল অঙ্কন প্রতিযোগিতা। সার্বজনীন শৈল্পিক মঞ্চে এই পরিবেশনা সামাজিক সম্প্রীতির মেলবন্ধনে ভিন্নমাত্রা যোগ করে।
গুলশান-বনানী পূজা ফাউন্ডেশন ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে সঙ্গতি রেখে এবার ‘ভূ-প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা’কে মূল বিষয়বস্তু হিসেবে বাছাই করেছে । পরিবেশবান্ধব জৈব-জলীয় উপকরণ যেমন: বাঁশ, খড়, পাট, কাদামাটি এবং দেশীয় কারিগর দিয়ে তৈরি কাপড় দিয়ে এবারের সম্পূর্ণ মন্ডপটি নির্মাণ করা হয়েছে। নকশার মূল বিষয় ছিল ‘পঞ্চভূত’ অথবা প্রকৃতির মূল পাঁচ উপাদান – ক্ষিতি (মাটি), অপঃ (জল), তেজ (আগুন), মরুত (বাতাস) ও ব্যোম (মহাশূণ্য)। জগদ্ধাত্রী দেবীর আরাধনার পাশাপাশি এটি প্রাণ-প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীক হিসেবে দেখছেন ফাউন্ডেশনের সদস্যরা।
জিবিএসপিএফ-এর সভাপতি জেএল ভৌমিক বলেন, “দুর্গাপূজা কেবল পূজার একটি পবিত্র উপলক্ষই নয়, এটি এমন একটি উৎসব, যেখানে আমাদের সম্প্রদায় ও সমাজের নিজস্ব সুসমৃদ্ধ ঐতিহ্য, সম্মিলিত মূল্যবোধ এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা উদযাপনের জন্য একত্রিত হয়। ১৮ বছর ধরে, গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশন পরিবার এবং প্রতিবেশীদের জন্য ভক্তি ও আনন্দে একত্রিত হওয়ার একটি আনন্দময় প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে।”
ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার অসীম কুমার জোয়ারদার বলেন, “শারদীয় দুর্গোৎসবের মূল যদিও দেবীর আরাধনা, কিন্তু এই উৎসব তার চেয়েও অনেক বেশি অশুভ-দমনের ও শান্তিকামীদের মহামিলনের উদযাপন। এটি ভালোবাসা, একতা ও বৈষম্যহীনতার উৎসব। এই বছর আমাদের উৎসবের বিষয়বস্তু, ‘প্রসারণে শান্তির সন্ধানে’- যা বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তার এ অসময়ে, বৈষম্যের ঊর্ধ্বে উঠে মানবপ্রেম ও সহমর্মিতাকে আলিঙ্গন করার আমন্ত্রণ। মা দুর্গার আশীর্বাদে, এই উৎসব আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আরও ন্যায়ভিত্তিক, সহানুভূতিশীল এবং শান্তিময় সমাজ গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।”
এই উৎসব আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতায় ছিল ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, ডেসকো, ওয়াসা, সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহ, সশস্ত্র বাহিনী এবং বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন কর্পোরেট ও বাণিজ্যিক সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় এই উৎসব হাজার হাজার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। প্রচারণায় ও ফাউন্ডেশনের সার্বজনীনতার বাণী সকলের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য গণমাধ্যম কর্মীরাও অসাধারণ ভূমিকার রেখেছেন।
প্রসঙ্গত: প্রায় দুই দশক ধরে গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশন ঢাকার দুর্গাপূজা উদযাপনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ভক্তি, সংস্কৃতি এবং সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল ও সার্বজনীন সেবার মাধ্যমে ফাউন্ডেশনটি বাংলাদেশের শান্তিকামী সমাজের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

পাঠকের মতামত